Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124
Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124
৫ আগস্ট বিপ্লব ও শহীদ জিয়ার আদর্শের মিল নিয়ে প্রকৌশলী হানিফের বিশ্লেষণ—গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও জাতীয় আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।
প্রকৌশলী মোঃ হানিফ, বিএসসি ইঞ্জি:(বিদ্যুৎ গবেষক)
৫ ই আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে গনমানুষের মধ্যে একটি আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। গণমানুষের প্রত্যাশা ভোটাধিকার ফিরে পাওয়া, অবাধ রাজনীতি করার অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার , অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার, ধর্মীয় অনুশীলনে স্বাধীনতা, সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করা। আমরা যদি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্র শাসন বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখতে পাই ৫ ই আগস্টের গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা আর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আকাঙ্ক্ষার মধ্যে কি আশ্চর্যজনক মিল!
শহীদ জিয়া যে জনতার জিয়া তার প্রমাণ হলো, তিনি শুধু আকাঙ্ক্ষাই করেননি, সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে গেছেন। কিন্তু হায়নার দল তার সেই সফলতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ৩০শে মের সেই কালো রাতে তাকে হত্যা করেন। কিন্তু তারা শহীদ জিয়ার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। বাংলাদেশের কোটি কোটি জনতার হৃদয়ে আজও শহীদ জিয়ার আদর্শ বেঁচে আছে। শহীদ জিয়ার প্রতিষ্ঠিত আদর্শিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বারবার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া তারই প্রমাণ।
১৯৭১এ ২৫ শে মার্চ পাক হানাদারবাহিনী যখন এদেশের নিরস্র বাঙালির উপর রাতের অন্ধকারে ঝাঁপিয়ে পড়ল, তখন শেখ মুজিব তার পরিবারসহ হানাদার বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে নিরাপদে চলে গেল। দিশেহারা জাতিকে রুখে দাঁড়ানোর জন্য কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন তৎকালীন মেজর জিয়া। ৯ মাস সম্মুখ সমরে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন মেজর জিয়া। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে লাখো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হলো ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা!
স্বাধীনতার পর শেখ মুজিব পাক স্বাধীনতা হরণ করে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করেন। শেখ মুজিব বাকশাল গঠনের মধ্য দিয়ে গণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা সিন্দুককে আবদ্ধ করেছিলেন। কোন প্রকার বাক স্বাধীনতা প্রকাশ পেলে নিশ্চিত জীবনহানি অথবা কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠ আশ্রয় ছিল নিত্যকার ঘটনা।
কিন্তু ১৯৭৭ সালের সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যখন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হন, তখন তিনি সিন্দুকে আবদ্ধ গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার দুয়ার খুলে দেন। তিনি লুন্ঠিত গণতন্ত্রের চর্চার অবাধ স্বাধীনতা আবার ফিরিয়ে দেন। শেখ মুজিবের নিজের হাতে গলা টিপে হত্যা করা আওয়ামী লীগকে পুনরোজ্জীবিত করার সুযোগ দেন। নিষিদ্ধ জামাতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি আবার নতুন করে গণতন্ত্র চর্চায় অংশগ্রহণ করে। অবাধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ১৯৭৮ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ সংসদে বিরোধীদলীয় আসনে বিরোধীদলের ভূমিকা পালনের সুযোগ পান।
তারপর থেকে বাংলাদেশের ইতিহাসে রচিত হয় সংসদীয় রাজনীতির এক সোনালী ইতিহাস। তার আমলে সকল ধর্মের জনগণ নিজ নিজ ধর্মের আচার অনুষ্ঠান অবাধে পালন করেন। বিশেষত বৃহত্তর জনগোষ্ঠী মুসলমান হওয়ার কারণে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনায় ইসলামী মূল্যবোধ গ্রহণ করেন। তাইতো তিনি সংবিধানে মহান আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করেন।
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাকশাল কর্তৃক নিষিদ্ধ সকল সংবাদপত্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন। তিনি বাক স্বাধীনতার অন্যতম নজির স্থাপন করেন। তিনি একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কর্মসূচিতে গেলে ছাত্র শিক্ষকদের ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে পড়েন। তখন তিনি সেই প্রতিবাদকে দমন না করে সাহসিকতার সাথে ছাত্র শিক্ষকদের মুখোমুখি হন। এক পর্যায়ে ছাত্র শিক্ষকদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে সভা করে ছাত্র শিক্ষকদের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে ঐতিহাসিক নজির স্থাপন করেন।
তিনি জনগণের মধ্যে অর্থনৈতিক সুবিধা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় গ্রাম সরকার গঠন করে রাষ্ট্রীয় সুবিধাদী জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছিয়ে দেন। কৃষি নির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার করার জন্য তিনি খাল খনন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সেচের মাধ্যমে কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিপ্লব সাধন করেন। শেখ মুজিবের তলা বিহীন বাংলাদেশকে খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে তিনি সফল হন। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি দিয়ে তিনি সবুজ বাংলা গড়ার অন্যতম কারিগর।
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশে ক্ষুদ্র শিল্প ও মাঝারি শিল্পের বিপ্লব শুরু করেন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সর্বপ্রথম বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানির কারখানা স্থাপন করেন। তিনি তৈরি পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ঐতিহাসিক চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করেন। তার আমলেই সরকারের আনুকূল্যে বিভিন্ন রকমের ক্ষুদ্র শিল্প ও মাঝারি শিল্পের বিপ্লব সংঘটিত হয়।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশের বেকার জনগোষ্ঠীকে কর্মের হাতিয়ারে পরিণত করার জন্য ব্যাপক হারে কারিগরি শিক্ষার প্রসার করেন। শহীদ জিয়া ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মোচন করেন। তিনি কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে বিভিন্নভাবে মর্যাদা প্রদান করেন। চাকুরীতে পদোন্নতি সহ প্রনোদনা সুবিধা প্রদান করে উৎসাহ দান করেন। কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে রপ্তানি শুরু করেন। ফলে একদিকে কৃষি বিপ্লব, অন্যদিকে গার্মেন্টসের রপ্তানি আয়, তার ওপর বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রায় দ্রুত দেশের আর্থ-সামাজিক এবং গণ মানুষের আর্থিক ব্যাপক উন্নতির মধ্য দিয়ে জনমানুষের গণ আকাঙ্ক্ষা পূরণে দেশ এগিয়ে যায়।
স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছিলেন অকুতোভয় সিপাহ শালার। মিয়ানমারের সাথে একবার উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ার পর তিনি সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করেন। বঙ্গোপসাগরে তালপট্টি নিয়ে তিনি ভারতের সাথে চোখে চোখ রেখে কথা বলেন। কিন্তু, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী চক্র শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের এই অভূতপূর্ব উন্নয়নে, সফলতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ১৯৮১ সালে ৩০ মে কালো রাতে তাকে শহীদ করেন। কিন্তু তার রেখে যাওয়া আদর্শ বাস্তবায়নে দীপ্ত শপথে এগিয়ে এসেছেন তারই যোগ্য উত্তরসূরি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান।
আজকের এই দিনের প্রার্থনা মহান আল্লাহ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে জনকল্যাণের পুরস্কার স্বরূপ জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত করুন। আমীন।
প্রকৌশলী মোঃ হানিফ
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিইএব)